মেসোআমেরিকান মিথলজি-ওলমেক ও মায়া

Image
-
পৃষ্ঠা – ৮৪০
মুদ্রিত মূল্য – ৩০০০.০০ টাকা
প্রকাশনী – জাগৃতি প্রকাশনী

ফ্ল্যাপ:

“ত্রয়োদশ যুগের শেষে, যখন ইটজা ক্ষমতার শীর্ষে থাকবে, সেই সাথে টানকাহ নামের শহরটিও, তখন ঈশ্বরের সংকেতও উচ্চতায় উঠে আসবে এবং ‘ক্রস’, যার দ্বারা বিশ্ব আলোকিত হয়েছিল, তা প্রকাশিত হবে। ভবিষ্যতে পুরুষদের ইচ্ছার মধ্যে পার্থক্য দেখা দিবে, যখন এই সংকেত আসবে...তোমরা (সেসময়ে) পূর্ব থেকে আসা দাড়িওয়ালা অতিথিদের গ্রহণ কোরো, যারা ঈশ্বরের সংকেত নিয়ে আসবেন, যারা আমাদের কাছে দয়া ও করুণা নিয়ে আসবেন। আমাদের জীবনের সময় আসছে...”

মায়াদের, বিশেষত ইউকাটান মায়াদের ধর্মীয় গ্রন্থ ‘চিলাম বালাম’-এ এভাবেই লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল এই ভবিষ্যদ্বাণী। ফলে মায়ারা পূর্ব দিক থেকে আসা দাড়িওয়ালা স্প্যানিশ অতিথিদের গ্রহণ করেছিলেন!

কোয়াটজাকোয়াটল ছিলেন টলটেক জাতিদের সৃষ্টিকর্তা দেবতা, তিনি ছিলেন সকাল ও সন্ধ্যার তারা। অনেক অনেক পরে যখন অ্যাজটেকরা মেক্সিকোতে তাঁদের প্রভাব বিস্তার করেন, তখন তাঁরাও কোয়াটজাকোয়াটলকে তাঁদের দেবতা হিসাবে গ্রহণ করেন। পুরাণে ছিল, কোয়াটজাকোয়াটল সাপে পরিপূর্ণ ভেলাতে করে পূর্ব দিকে সাগরে হারিয়ে গিয়েছেন। হারিয়ে যাবার পূর্বে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি আবার ফিরে আসবেন। তাই খ্রিষ্টাব্দ ১৫১৯ সালে পূর্ব দিক থেকে যখন স্প্যানিশ হারনান কর্টেস এসেছিলেন, অ্যাজটেক রাজা দ্বিতীয় মক্টেজুমা তাঁকে কোয়াটজাকোয়াটল হিসাবে বরণ করে নিয়েছিলেন। ফলে, অ্যাজটেক সাম্রাজ্য স্প্যানিয়ার্ডদের পদানত হয়েছিল!

ইনকা রাজা হুয়ানা কাপাক যখন মৃত্যুশয্যায় ছিলেন, তিনি তাঁর উত্তরাধিকারী হুয়াসকারকে প্রাচীন ইনকা পুরাণের কথা স্মরণ করিয়ে বলেছিলেন, “ত্রয়োদশতম ইনকা রাজার সময়ে, যখন তোমরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়বে, তখন পূর্ব দিক থেকে আমাদের সূর্য দেবতা আসবেন। আমি তোমাকে আদেশ দিচ্ছি, তুমি তাদেরকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে গ্রহণ করবে, তাদের বাধ্যগত থাকবে। তারা অবশ্যই তোমার চেয়ে অনেক উন্নত প্রকৃতির হবে, তারা ইনকাদের শাসন করবে!”

হুয়াসকার এবং তাঁর ভাই আতাহুয়ালপা যখন নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করছিলেন, স্প্যানিয়ার্ডরা এসেছিলেন পূর্ব দিক থেকে! ইনকাদের সূর্য দেবতা ফিরে এসেছেন! ফলে ফ্রান্সিসকো পিজারোর পক্ষে খুব একটা অসম্ভব হয়ে উঠেনি বিশাল ইনকা সাম্রাজ্যকে পরাভূত করতে!

মায়া, অ্যাজটেক এবং ইনকা– মেসোআমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার তিনটি মহান সভ্যতা। এই তিনটি সভ্যতারই সম্পূর্ণ পরিসমাপ্তি ঘটেছিল স্প্যানিয়ার্ডদের কাছে। বলা হয়ে থাকে, এত সহজে স্প্যানিয়ার্ডরা এদেরকে জয় করতে পেরেছিলেন তিন সভ্যতার এই তিনটি ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য, যেখানে প্রতিটিতেই বলা হয়েছে– দেবতার পুনরাগমন ঘটবে! তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন কর্টেস কিংবা পিজারো সেই দেবতা, যার পুনরাগমন ঘটেছে তাঁদেরকে শান্তি এনে দেবার জন্য।

এই তিনটি ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, এমনকি মাঝামাঝি সময়েও ঐতিহাসিকরা এই পুরাণগুলোর সত্যতা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু এখন তাঁরা বলে থাকেন, মূল কোনো গ্রন্থে এগুলোর অস্তিত্ব ছিল না। স্প্যানিশরাই এই পুরাণগুলোকে নিজেদের সুবিধামতো পরিবর্তন করেছেন। এই পুরাণ বা ভবিষ্যদ্বাণীগুলো আসলেই ছিল, নাকি এগুলো স্প্যানিয়ার্ডদের হাতে পরিবর্তিত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমরা এই গ্রন্থের নির্দিষ্ট অংশে বিস্তারিত আলোচনা করব; তবে এটুকু স্বীকার করা কঠিন নয় যে, শুধু এসব ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য নয়, আরো অনেক কারণেই এই তিনটি সভ্যতা সম্পর্কে আমাদের প্রবল আগ্রহ আছে। আমাদের আগ্রহ আছে মায়া পিরামিড নিয়ে, মায়া হায়ারোগ্লিফিক নিয়ে। আমরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম খ্রিষ্টাব্দ ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর– এই বুঝি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেল! আমাদের আগ্রহ আছে মায়া পঞ্জিকা নিয়েও। আমাদের প্রবল ইচ্ছা আছে জানার অ্যাজটেকদের কী পরিমাণ সোনা-রূপা ছিল? সত্যিই কি তাঁরা সোনাকে হেলাফেলার মতো এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতেন? আমাদের ভীষণ তৃষ্ণা আছে জানার– এল ডোরাডো কোথায় আছে?

এই জানার প্রবল আকাঙ্ক্ষা থেকেই মলাটের ভিতরে তিনটি বিশাল সভ্যতাকে নিয়ে আসার এক দুর্দান্ত দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা হচ্ছে এই প্রথম গ্রন্থটি। ‘মেসোআমেরিকান মিথলজি-ওলমেক ও মায়া’ নামক এই গ্রন্থে থাকবে মেসোআমেরিকার মায়া সভ্যতা ছাড়াও, যাকে মেসোআমেরিকার মাতৃ-সংস্কৃতি বলা হয়ে থাকে, সেই ‘ওলমেক সংস্কৃতি’র কথাও। অন্যদিকে এই সিরিজের পরবর্তী দুইটি গ্রন্থে থাকবে মেসোআমেরিকার অ্যাজটেক এবং ইনকা সাম্রাজ্য ছাড়াও, দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য সভ্যতা এবং সংস্কৃতির পুরাণ কথা।

এস এম নিয়াজ মাওলা সম্পর্কে

এস এম নিয়াজ মাওলা। পেশায় একজন চিকিৎসক আর নেশায় একজন নবীন কথা সাহিত্যিক। পেশাগত জীবনটাকে মানুষ সিরিয়াসলি নেয়। এই পেশাগত জীবনের টানেই ছোটবেলা থেকে এত পড়াশুনা করে, এত এত ডিগ্রী নিয়ে একটা পর্যায়ে এসে মানুষ থিতু হয়। ক্যারিয়ার চলতে থাকে আপন গতিতে। সময়টাও চলতে থাকে নিজের মতো করে। ব্যাপারটায় কেমন একটা বাধ্যবাধকতার গন্ধ পাওয়া যায়। তাই না? পেশাগত জীবনটাকে চাবি দিয়ে ঠিকঠাক না রাখলে পুরো জীবনটাই তছনছ হবার পথে চলে যায়। অথচ এই জীবনটাকে ঠিক রাখতে মনের খোরাকের ব্যবস্থাও করতে হয়! নিয়াজ ভাইয়ের এই মনের খোরাক হচ্ছে লেখালেখি!