এই একাকী মানুষেরা পৃথিবীর ছায়াছবির লাইব্রেরিয়ান

ব্যথা যখন গাঢ় নীল রাত্রির মতো চেপে বসে, মানুষ শিকড়হীন গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকে—মাটি নেই, পাতা ঝরে, কিন্তু পতনের শব্দটুকুও পৃথিবী শুনতে পায় না। তার হৃদয়ে তখন অদৃশ্য ভূমিকম্প; চোখের সামনে ভাঙাচুরা হয়ে যায় সমস্ত আলোর শহর, অথচ ঠোঁট দুটো জমে যায় বরফের ভাষায়। সে হাত বাড়ায় সাহায্যের দিকে, কিন্তু হাতের আঙুলেই লেখা থাকে অদৃশ্য এক কবিতা: "আমি একা।"

মিশর: এক অসম্পূর্ণ সোনালি স্বপ্নের আখ্যান

May be an image of 2 people and the Great Sphinx of Giza
 
মিশর: এক অসম্পূর্ণ সোনালি স্বপ্নের আখ্যান
*************************************
মিশর আমার জন্য শুধু একটি দেশ নয়, এটি এক মহাকাব্যিক প্রতীক্ষা—যেখানে প্রতিটি বালিকণা ফারাওদের পদচিহ্নের গল্প কানে ফিসফিস করে, নীল নদের জল ক্লিওপেট্রার অশ্রুতে লবণাক্ত, আর মরুভূমির বাতাসে ভাসে আলেকজান্ডারের শেষ নিঃশ্বাস। তবুও কেন যেন এই স্বপ্নের মুখোমুখি দাঁড়াতেই আমি কাঁপি। হয়তো ভয়, এই বিশাল ইতিহাসের সামনে আমি একা এক ফোঁটা জল; হয়তো ভাবি, এই নশ্বর দেহে কি এত বড় এক মহাদেশের গল্প ধারণ করা সম্ভব?

আমরা চলে গেলাম, কিন্তু আমাদের গল্প এখনও বেঁচে আছে

 
🟥 মায়া সভ্যতা: সময়ের গর্ভে লুকিয়ে থাকা এক মহাকাব্যিক অন্তর্ধান
পৃথিবীর বুকে একদিন জঙ্গলের গহিনে জেগে উঠেছিল সূর্যকিরণে ঝলমলে পিরামিড, রাজপ্রাসাদের মাথায় উড়েছিল রাজকীয় পতাকা, মাটির নীচে শায়িত ছিল স্বর্ণখচিত সমাধি। মায়ারা লিখে গিয়েছিলেন মহাকালের গণনা, গড়ে তুলেছিলেন পাথরের শহর—যেখানে প্রতিটি চিহ্ন ছিল নক্ষত্রের ভাষা। কিন্তু একদিন সেই মহিমান্বিত নগরীগুলো নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মন্দিরের গায়ে জমে থাকা শিশিরের মতো মায়ারা মুছে গেলেন ইতিহাসের পাতায়। কেন? কী সেই রহস্য, যা আজও প্রত্নতাত্ত্বিকদের হৃদয়ে জ্বালায় অমীমাংসিত প্রশ্ন?
মিথলজি: সময়ের আয়নায় আঁকা মানবতার মহাকাব্য

মিথলজি: সময়ের আয়নায় আঁকা মানবতার মহাকাব্য

আমি কেন মিথলজি পড়ি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাকে ফিরে তাকাতে হয় সেই বাচ্চাকালে, যখন টিভিতে সিরিজ দেখেছি রামায়ণের যুদ্ধ, অথবা যখন ক্লাসে পড়েছি হেক্টরের বীরত্ব কিংবা মহাভারতের বিস্ময় শুনে মনে হতো—এগুলো শুধু গল্প নয়, এগুলো যেন কোনো অদৃশ্য সূত্রে বাঁধা আছে আমার নিশ্বাসের সাথে, আমার রক্তের লালিমায়। মানুষ আমাকে বলে, "এসব আজগুবি! পাগলামি!" কিন্তু আমি তো দেখি, প্রাচীন সেই গল্পগুলোর পাতায় পাতায় জমে থাকা শিশিরবিন্দুতে প্রতিফলিত হয় আজকের সকালের সূর্য। মিথলজি আমার জন্য কখনো "গল্প" নয়; এ তো এক মহাসমুদ্র, যার তলদেশে লুকিয়ে আছে মানবসভ্যতার আদি স্রোত।

বার্ধক্যের আয়না

 
সেদিন সন্ধ্যায় মেঘনার ঘাটে বসে ছিলাম। পাশের দোকান থেকে ভেসে আসছিল রেডিওর গজল— "প্রেম কি একা বাঁশির সুরে জাগে..."। হঠাৎ মনে পড়ে গেল, পঁচিশে বৈশাখের সেই বিকেল যখন প্রথম তার চোখে ডুবে গিয়েছিলাম। সে সময় বয়স কত হবে? বাইশ? তেতাল্লিশ? না, সংখ্যাগুলো আজ মিশে গিয়েছে মাথার ভেতরকার ঝিনুক-কোঁড়ানো স্মৃতির স্তূপে। তখন তো ক্যালেন্ডার পাতার চেয়ে তার হাসিই বেশি গুনতাম। এখন ক্যালেন্ডারে হজ্বে যাওয়ার তারিখ ঘেরা দাগে ভরা, আর হাসি গোনার হিসাব মেলে না।

অক্ষরের ফেরিওয়ালা

 
বইপাড়ার গলি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চোখ আটকে যায় সেই দৃশ্যে—এক তরুণ লেখককে ঘিরে পাঠকেরা ফুলের মতো ফুটে আছে। তার হাতে বই, মুখে উত্তরোত্তর প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন মৃদু হেসে। বইয়ের প্রচ্ছদে নামটা ঝলমলে সোনালি অক্ষরে: "সাদাত হোসাইন"। নামের নিচে ছোট্ট করে লেখা—"বেস্টসেলার"। আমার জুতোর ফিতা খুলে যায়। বেঁধে নেওয়ার ছলে নিচু হয়ে দেখি, তার জুতোও কি আমার মতো ময়লা? না, চকচকে সাদা। হয়তো সাফল্যের রঙ শুধু বইয়ের পাতায় নয়, জুতোতেও লাগে!

Subcategories

এস এম নিয়াজ মাওলা সম্পর্কে

এস এম নিয়াজ মাওলা। পেশায় একজন চিকিৎসক আর নেশায় একজন নবীন কথা সাহিত্যিক। পেশাগত জীবনটাকে মানুষ সিরিয়াসলি নেয়। এই পেশাগত জীবনের টানেই ছোটবেলা থেকে এত পড়াশুনা করে, এত এত ডিগ্রী নিয়ে একটা পর্যায়ে এসে মানুষ থিতু হয়। ক্যারিয়ার চলতে থাকে আপন গতিতে। সময়টাও চলতে থাকে নিজের মতো করে। ব্যাপারটায় কেমন একটা বাধ্যবাধকতার গন্ধ পাওয়া যায়। তাই না? পেশাগত জীবনটাকে চাবি দিয়ে ঠিকঠাক না রাখলে পুরো জীবনটাই তছনছ হবার পথে চলে যায়। অথচ এই জীবনটাকে ঠিক রাখতে মনের খোরাকের ব্যবস্থাও করতে হয়! নিয়াজ ভাইয়ের এই মনের খোরাক হচ্ছে লেখালেখি!