নোবেল শান্তি পুরস্কার তুলে দেওয়া দরকার

নোবেল শান্তি পুরস্কার তুলে দেওয়া দরকার—এই কথাটা আমি আবেগে বলছি না। মাঝরাতে মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটে চলেছে, সেটাই একমাত্র কারণ নয়। এসব ঘটনা আমরা অনেক আগেই দেখেছি, বরং আমি তো জন্ম থেকেই দেখে আসছি।
এই পৃথিবীতে একটা কথা সবসময় সত্য—যারা শক্তিশালী, তারা দুর্বলদের নিঃসন্দেহে আঘাত করবে। এই নিয়ম শুধু দেশ-দেশান্তরে না, আমাদের চারপাশেও চলে। বড় শক্তিগুলো কখনোই নিজের সমান শক্তির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করে না। তারা বসে থাকে মুখোমুখি, ঠাণ্ডা লড়াই করে, কিন্তু গুলি চালায় না। কারণ জয় নিশ্চিত না। কিন্তু যেই পক্ষ দুর্বল, তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে এদের একটুও দেরি হয় না।
 
আরেকটা অদ্ভুত নিয়ম এই দুনিয়ার—তুমি যদি শক্তিশালী হও, তবে যা করছো সেটাই ‘ন্যায়’। তোমার কাজকে তখন অন্যায় বলা যাবে না। তুমি যদি ক্ষমতাবান হও, তুমি কাউকে বিনা কারণে ধ্বংস করলেও তোমার কিছু হবে না। কিন্তু একজন দুর্বল যদি একই কাজ করে, তখন সেটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অন্যায়। তখন সবাই মুখে ফেনা তুলে বিচার চাইবে।
 
আর সব অদ্ভুত রূপকথার মতো এখানেও থাকে ছাগলের তৃতীয় বাচ্চারা। যারা প্রথমে দু-একটা বুলি কপচাবে দুর্বলের পক্ষে, তারপর মুখ ঘুরিয়ে বলবে—“তীব্র নিন্দা জানাই।” কিংবা, “আহা! আজ আকাশ বড় শান্ত!” এইরকম মানুষেরা সব সময়ই থাকে। যখন নিজেরাই কোনো শক্তির জোরে নিঃশ্বাস নিতে পারে না, তখন বলেন, “পৃথিবী তো কোনোদিনই স্বাধীন ছিল না!”
 
আমি ইতিহাস ভালোবাসি শুধু গল্প শুনতে নয়, তার ভেতরের সত্যটা বুঝতে। ইতিহাস আমাদের দেখিয়েছে—কোনো সাম্রাজ্যই দুইশ বছরের বেশি টিকতে পারেনি। আলেকজান্ডার পারেনি, পারসিয়ান বা রোমান কিংবা অটোমানরাও না। প্রত্যেক সাম্রাজ্য ধ্বংসের আগে একবার ঝলসে উঠেছে, যেন শেষ প্রদীপটা নিভে যাওয়ার আগে আরও একবার আলো দেয়। তাই তো বলে—পিপীলিকার পাখা গজায় মরার আগমুহূর্তে!
 
সবকিছুই একসময় চূড়ায় ওঠে—চরম ক্ষমতায়। কিন্তু তারপর? তারপর আসে পতন। এই পতন কেউ ঠেকাতে পারে না। সেটা দেশ হোক, ব্যক্তি হোক, বা সাম্রাজ্য।
 
প্রশ্ন একটাই—কীভাবে বুঝবো, সে এখন চূড়ায়? আরও ভয়ংকর প্রশ্ন হলো—সে নিজেই কি জানে, কত দ্রুত ও কত ভয়ানক তার পতন হতে চলেছে?

এস এম নিয়াজ মাওলা সম্পর্কে

এস এম নিয়াজ মাওলা। পেশায় একজন চিকিৎসক আর নেশায় একজন নবীন কথা সাহিত্যিক। পেশাগত জীবনটাকে মানুষ সিরিয়াসলি নেয়। এই পেশাগত জীবনের টানেই ছোটবেলা থেকে এত পড়াশুনা করে, এত এত ডিগ্রী নিয়ে একটা পর্যায়ে এসে মানুষ থিতু হয়। ক্যারিয়ার চলতে থাকে আপন গতিতে। সময়টাও চলতে থাকে নিজের মতো করে। ব্যাপারটায় কেমন একটা বাধ্যবাধকতার গন্ধ পাওয়া যায়। তাই না? পেশাগত জীবনটাকে চাবি দিয়ে ঠিকঠাক না রাখলে পুরো জীবনটাই তছনছ হবার পথে চলে যায়। অথচ এই জীবনটাকে ঠিক রাখতে মনের খোরাকের ব্যবস্থাও করতে হয়! নিয়াজ ভাইয়ের এই মনের খোরাক হচ্ছে লেখালেখি!