মিশর ট্যুর প্রায় শেষ হবার পথে

মিশর ট্যুর প্রায় শেষ হবার পথে। ১৭ দিনের বিশাল এক ট্যুরে এসেছিলাম। একে একে গিজা, আসোয়ান, আবু সিম্বেল, লুক্সোর, শার্ম আল সেইখ, দাহাব, সিনাই পর্বত, সিওয়া মরুদ্যান দেখে এখন আলেকজান্দ্রিয়ায়। আগামীকাল কায়রোতে যাব আবার, দুইরাত থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে।
 
এই শরীর নিয়ে একা একা এই বিশাল ট্যুর আল্লাহর রহমতে এখনো পর্যন্ত নির্বিঘ্নে করছি। যা যা পরিকল্পনা করে এসেছিলাম, সেইভাবেই এগোচ্ছে। কিন্তু এই শেষ দিকে এসে শরীরে ধীরে ধীরে ক্লান্তি বাসা বাঁধতাছে। অনেকদিন টানা এভাবে দৌঁড়াইনি। প্রতিদিন যেভাবে হেঁটেছি, অনেকদিন পর নিজেকে আবার আবিষ্কার করেছি।
 
এখন আলেকজান্দ্রিয়ায় দুপুর সাড়ে তিনটা বাজে। আজকেই সকাল সাড়ে ছয়টায় আলেকজান্ডারের এই শহরে এসেছি। এয়ার বিএনবি থেকে একটা বাসা ঠিক করেছিলাম। সেখানে গিয়ে শুধুমাত্র ফ্রেশ হয়ে নিয়েই বাইরে বেরিয়ে পড়েছিলাম।
 
প্রথমে ভূমধ্যসাগরের পাড়ে বিবলিওথিকা আলেকজান্দ্রিনা লাইব্রেরীতে বেশকিছু সময় কাটালাম। সেখান থেকে বের হয়ে উদ্দেশ্য ছিল প্রাচীন রোমান থিয়েটারে যাবার। দূরত্ব প্রায় ২.৫ কিলোমিটার। এতো সুন্দর বাতাস! এতো সুন্দর ভূমধ্যসাগর! সাগরের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ৩০ মিনিটে চলে আসলাম থিয়েটারে। শেষ ১৫ মিনিট অবশ্য শহরের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হয়েছে।
 
রোমান থিয়েটার থেকে উবারে করে পম্পেইস পিলারে, সেখান থেকে আবার হেঁটে ক্যাটাকোম্বসে। ক্যাটাকোম্বস থেকে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘন্টাখানেক হাঁটলাম। রাস্তাঘাট, শহর আর মানুষ দেখলাম।
 
মিশরে আসোয়ান, লুক্সোরকে এক ধরনের শহর, সাথে গিজাকেও ধরতে পারি, অন্যদিকে শার্ম আল সেইখ আর দাহাবের চরিত্র ভিন্ন। সিওয়া পুরো আমার বাংলাদেশ। আবার আলেকজান্দ্রিয়া এগুলো থেকে ভিন্ন। প্রতিটা শহরের চরিত্র আলাদা। কোনো শহর মধ্যবিত্তদের জন্য, কোনো শহর শুধুমাত্র বিশাল ধনী ব্যক্তিদের জন্যই, আবার কোনো শহরে সবই আছে। কোথাও দেখা পাই আমাদের পুরান ঢাকা শহর, কোনো জায়গাতে দেখি বিশাল পরিকল্পিত নগরী। কোনো জায়গার মানুষ স্ক্যামার, আবার কোনো জায়গার মানুষ - মানুষের মতোই।
 
আমি এখন বসে আছি আবু আল আব্বাস মসজিদের সামনে। খাচ্ছি। সি ফুড স্যুপ আর অক্টোপাস গ্রিল। এরপরে মসজিদে যাব। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি শুধু মন্দিরই দেখাচ্ছি, মসজিদ দেখাচ্ছি না! 😊
 
সবকিছু নিয়েই বই আসবে। Washi Tarafder সেই গতবছর ধরে আমাকে গুতাচ্ছে। একবার তো শুধুমাত্র আমার সাথে কথা বলার জন্য কক্সবাজারে চলে এসেছিল। তাই এই বইটা ওর, জ্ঞানকোষের।
 
ছবিতে যে দুজন মেয়ে দেখা যাচ্ছে, একজন মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষে পড়ে, আরেকজন এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। হবু ডাক্তারের নাম শৈলী। এরা দুই বোন, বাবা মায়ের সাথে মিশর এসেছে। আমার সাথে রোমান থিয়েটারে দেখা। সবচেয়ে বড় কথা আমার মিশরীয় মিথলজি - আদি থেকে অন্ত বইটি পড়েই তাদের আগ্রহ হয়েছে মিশরে আসার।
 
আর কিছু চাই না। এই আগ্রহটা গড়ে তোলার জন্যই আমি সার্থক।
 

এস এম নিয়াজ মাওলা সম্পর্কে

এস এম নিয়াজ মাওলা। পেশায় একজন চিকিৎসক আর নেশায় একজন নবীন কথা সাহিত্যিক। পেশাগত জীবনটাকে মানুষ সিরিয়াসলি নেয়। এই পেশাগত জীবনের টানেই ছোটবেলা থেকে এত পড়াশুনা করে, এত এত ডিগ্রী নিয়ে একটা পর্যায়ে এসে মানুষ থিতু হয়। ক্যারিয়ার চলতে থাকে আপন গতিতে। সময়টাও চলতে থাকে নিজের মতো করে। ব্যাপারটায় কেমন একটা বাধ্যবাধকতার গন্ধ পাওয়া যায়। তাই না? পেশাগত জীবনটাকে চাবি দিয়ে ঠিকঠাক না রাখলে পুরো জীবনটাই তছনছ হবার পথে চলে যায়। অথচ এই জীবনটাকে ঠিক রাখতে মনের খোরাকের ব্যবস্থাও করতে হয়! নিয়াজ ভাইয়ের এই মনের খোরাক হচ্ছে লেখালেখি!